ভ্রু-ভঙ্গি
লেওনার্দো দা ভিঞ্চির আঁকা মোনালিসা ছবিতে ফটোশপ করে একজোড়া ভ্রু বসিয়ে দেখুন না, নিমেষে পাল্টে যাবে আপনার চিরচেনা মোনালিসা। কাজেই নাক-চোখ-ঠোঁটের চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ নয় আপনার ভ্রুযুগল। ভ্রু চোখ ও চেহারার মাঝে যেমন ভারসাম্য তৈরি করে, তেমনি মুখের সৌন্দর্য অনেকখানি নির্ভর করে পরিপাটি ভ্রুযুগলের ওপর। যাঁদের ভ্রু চওড়া তাঁরা চেষ্টা করেন ভ্রুটাকে একটু চিকন করতে, আবার যাঁদের ভ্রু চিকন তাঁরা চেষ্টা করেন একটু বাড়িয়ে এঁকে ভ্রুর আকৃতিটা সুন্দর করে নিতে। সবক্ষেত্রে মূল উদ্দেশ্য একটাই থাকে, যা হলো চেহারার সঙ্গে একজোড়া মানানসই ভ্রু। তবে সেটা পাওয়া তেমন সহজ নয়—
কীভাবে যত্ন নেবেন
মুখের সঙ্গে ভ্রুর ত্বকও স্ক্রাব করুন। নিয়মিত স্ক্রাব করা হলে মৃত চামড়া ঝরে যাবে এবং ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বাড়বে। ফলে আপনার ভ্রু ঘন হতে সাহায্য করবে। ভ্রুর আশপাশে স্ক্রাব করার জন্য বাজার থেকে কেনা স্ক্রাবের চেয়ে বাড়িতে তৈরি মধু-চিনির স্ক্রাব সবচেয়ে ভালো। খেয়াল রাখবেন স্ক্রাব করার সময় খুব বেশি চাপ যাতে না পড়ে, তাতে ভ্রুর চুল ঝরে গিয়ে হিতে বিপরীত হতে পারে।
স্ক্রাবের পর অলিভ অয়েল, ক্যাস্টর অয়েল, ভিটামিন ই অয়েল বা পেট্রোলিয়াম জেলি দিয়ে আলতো করে মিনিট পাঁচেক ম্যাসাজ করুন। এটি ভ্রুর চুলে পুষ্টি ও শক্তি জোগাবে। অয়েল ম্যাসাজ দিনের অন্যান্য সময়ে অথবা প্রতি রাতে নিয়ম করেও করতে পারেন।
বাজারে ভ্রুর জন্য নানা ধরনের সিরাম পাওয়া যায়, যেগুলো তৈরি করা হয়েছে ভ্রুর লোমগুলো বৃদ্ধির জন্য। ভ্রু পাতলা হলে এগুলোও ব্যবহার করতে পারেন।
ভ্রু খুব বেশি প্লাক অথবা ওয়্যাক্স করা থেকে বিরত থাকুন। খুব বেশি প্লাক অথবা ওয়্যাক্স করা হলে লোমকূপের ক্ষতি হতে পারে। যার ফলে পরে ওই স্থানে আর লোম গজায় না। যদি দুর্ঘটনাবশত কখনো অনেকটা বেশি প্লাক অথবা ওয়্যাক্স হয়ে যায়, তবে মাস দুয়েক অপেক্ষা করুন যাতে লোমের ঘনত্ব আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসে। কিন্তু কারও কারও ক্ষেত্রে এর চেয়েও বেশি সময় লাগতে পারে তাই ধৈর্য সহকারে অপেক্ষা করতে হবে। তাই আগেভাগেই ভ্রুর স্বাভাবিক আকৃতি বজায় রেখে সতর্কতার সঙ্গে আশপাশের বাড়তি লোমগুলো পরিষ্কার করুন। মনে রাখবেন খুব সরু ভ্রু কখনোই ভালো দেখায় না। স্যালন থেকে প্লাক অথবা ওয়্যাক্স করলে দক্ষ হাতের সাহায্য নিন।
ভ্রু আঁকার জন্য
সাজের বেলায় ভ্রু আঁকাও একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আইব্রো পেনসিল অথবা আইব্রো পাউডার দিয়ে ভ্রু আঁকতে পারেন। স্বাভাবিক লুকের জন্য আইব্রো পেনসিল অথবা আইব্রো পাউডারের রং সব সময় চুলের রঙের চেয়ে এক অথবা দুই শেড হালকা নিন। একটু ‘বোল্ড লুক’ চাইলে চুলের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে আইব্রো পেনসিল অথবা আইব্রো পাউডারের রং বাছুন কিন্তু কখনোই তা যেন কালো রঙের না হয়। কালো রঙে ভ্রু আঁকলে তা চেহারাকে খুবই অস্বাভাবিক করে তোলে। পেনসিলের ছোট ছোট টানে ভ্রু আঁকুন, যাতে তা একেবারে ভ্রুর লোমের মতোই স্বাভাবিক দেখা যায়। এক দাগে মোটা করে ভ্রু আঁকবেন না। ভ্রুর শুরুর দিকটা গাঢ় রেখে শেষের দিকটা হালকা শেডে মিশিয়ে দিন। ভ্রু আঁকতে গিয়ে একটু এদিক-ওদিক হয়ে গেলে পরে তা কনসিলার দিয়ে ঢেকে ফেলুন। সবশেষে স্বচ্ছ মাশকারা দিয়ে ভ্রুর লোমগুলো নির্দিষ্ট জায়গায় বসিয়ে দিন।
লেখক: গ্রিনস্টোরি ব্লগের পরিচালক
শুষ্ক ত্বকের যত্নে
হিমেল হাওয়ার দিনগুলোতে কমবেশি সবারই ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়ে। অনেকেরই ত্বক ফেটে যায় এ সময়। তবে যাঁদের ত্বক এমনিতেই একটু শুষ্ক ও রুক্ষ প্রকৃতির, অন্যদের চেয়ে তাঁদের সমস্যা একটু বেশিই হয় এ সময়টাতে। শুষ্ক ত্বকের জন্য এ সময় তাই দরকার বাড়তি যত্ন।
শুষ্ক ত্বকের সমস্যা নিয়ে কথা বলেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চর্মরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ইমদাদুল হক। তিনি বলেন, শীতে কারও কারও ত্বক অতিরিক্ত ফেটে যায়। অতিরিক্ত ত্বক ফাটার সমস্যা হতে পারে জন্মগত কারণে। আবার কিছু রোগের কারণেও এমন হতে পারে। নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার লাগানোর পরও অতিরিক্ত ত্বক ফাটলে বুঝতে হবে, কোনো সমস্যার কারণে এমন হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
নিয়মিত যত্ন নিলে শুষ্ক ত্বকও হয়ে উঠবে লাবণ্যময়। ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতা ফিরে পেতে তাই এখনই হোন সচেতন। জেনে নিন শুষ্ক ত্বকের যত্নে রূপবিশেষজ্ঞ ফারজানা শাকিলের পরামর্শ।
দিনে দু-তিনবার অধিক ময়েশ্চারাইজারযুক্ত কোনো ক্রিম ব্যবহার করুন। অতিরিক্ত শুষ্ক ত্বকে বলিরেখা বেশি বোঝা যায় এবং অতিরিক্ত শুষ্কতার জন্য ত্বক তার স্বাভাবিক লাবণ্য হারায়। শুষ্কতা এড়াতে অবশ্যই ত্বকে নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে।
ত্বক পরিষ্কার রাখতে হবে সব সময়। যতবার মুখ ধোবেন ততবারই লাগাতে হবে ময়েশ্চারাইজার।
রাতে কিছুটা হালকা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন।
একটি ডিমের কুসুমের সঙ্গে বেশ খানিকটা দুধের সর, একটু মসুরের ডাল বাটা ও একটু মধু মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে ত্বকে লাগাতে পারেন। সপ্তাহে তিন দিন এ প্যাক ব্যবহারে ত্বকের অতিরিক্ত শুষ্ক ভাব কমে যাবে।
ত্বকের লাবণ্য ফিরিয়ে আনতে হারবাল ফেসিয়াল ছাড়াও বিভিন্ন বিউটি ফেসিয়াল করাতে পারেন।
শীতে পায়ের গোড়ালি ফাটার সমস্যাও বেড়ে যায়। যাঁদের ত্বক একটু রুক্ষ, তাঁদের গোড়ালি ফাটার সমস্যার সমাধানে তিনি দিয়েছেন আরও কিছু পরামর্শ।
নিয়মিত পায়ের গোড়ালি পরিষ্কার করুন।
গোড়ালির মৃতকোষ ঝামা দিয়ে ঘষে পরিষ্কার করে ফেলুন।
পায়ের গোড়ালি নরম রাখতে গ্লিসারিন বা কিছুটা তৈলাক্ত কোনো লোশন লাগাতে পারেন।
রাতে গ্লিসারিন বা লোশন লাগানোর পর পারলে মোজা পরে ঘুমান।
অকালে পাকা চুল ঢাকা
বয়স বিশ বা তিরিশের কোঠা পেরোতে না পেরোতেই মাথার চুল পাকতে শুরু করে অনেকেরই। অনেক ছেলেই কাঁচা-পাকা চুল নিয়ে বয়সের তুলনায় ভারিক্কি একটা ভাব নিয়ে ঘুরে বেড়ালেও মেয়েরা যেন এ নিয়ে একটু বেশিই বিপদে পড়ে। দুই-একগাছি চুলে পাক ধরলেও সেটা সামলানো হয়তো অত কঠিন না। কিন্তু মাথা ভর্তি যত্রতত্র পাকা চুল ঢেকে রাখাটা কী আসলেই মুশকিল? জেনে নিন কলপ না লাগিয়ে কিংবা বাজারের প্রসাধনী ব্যবহার না করেও পাকা চুল ঢেকে রাখার সহজ কিছু কলা-কৌশল।
কম বয়সে চুল কেন পাকে
কার চুল কী রঙের হবে তা নির্ভর করে জিনগত বৈশিষ্ট্য এবং বিশেষ হরমোন মেলানিনের ওপর। এই মেলানিনের অভাবের কারণেই চুল পাকে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের মেলানিন তৈরির ক্ষমতা কমে আসে বলেই বুড়ো বয়সে চুল পাকে। কম বয়সে চুল পেকে যাওয়ার একটা অন্যতম কারণ হতে পারে আমাদের শরীরে জিন বা বংশগতির প্রভাব। কিন্তু খাবারদাবারের ভেজাল ও পরিবেশগত দূষণসহ অতিরিক্ত মানসিক চাপ, ধূমপান বা জীবনযাপনের নানা সমস্যার কারণেও কম বয়সে চুল পাকতে পারে।
ঘরে বসেই পাকা চুল ঢাকুন
কিন্তু এই অকালে চুল পাকা ঠেকাতে বাজারি কলপসহ নানা ধরনের প্রসাধনীর ব্যবহার দীর্ঘমেয়াদে চুলের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই চুলের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি জোগান দিতে পারে এমন খাবারদাবার খাওয়ার অভ্যাস করা এবং যতটা সম্ভব প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে পাকা চুল ঢাকার চেষ্টা করাই ভালো। ঘরে বসে নিজেই নিজের পাকা চুলের সমস্যা দূর করার এমন কিছু সহজ উপায় তুলে ধরা হলো এখানে।
আমলকী
ঘরে বসে পাকা চুলের সমস্যা সমাধানে আমলকীর জুড়ি নেই। ভিটামিন সি আর অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ আমলকী তারুণ্য ধরে রাখতে খুবই কার্যকর। নিয়মিত আমলকী খেলে চুলের স্বাস্থ্য তো ভালো থাকেই সঙ্গে চুল পাকা রোধ করতেও তা সাহায্য করে। আমলকী থেঁতলে নিয়ে হালকা করে বেটে নিন, একটু পানি মিশিয়ে মণ্ড তৈরি করুন। আমলকীর মণ্ড চুলের গোড়ায় ঘষে ঘষে মাখুন। ১৫-২০ মিনিট রেখে দিয়ে বেশি করে পানি দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলুন। এভাবে সপ্তাহে দু-একদিন আমলকীর মণ্ড মাখলে চুল পাকা রোধ করতে উপকার পাবেন।
কারি পাতা আর নারকেল তেল
খাবারদাবারের মেনুতে নিয়মিত কারি পাতা রাখুন। কারি পাতার পুষ্টি উপাদান আপনার পেকে যাওয়া চুলগুলোকে হারিয়ে যাওয়া রঙে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে। পাশাপাশি নারকেল তেলে কারিপাতা মিশিয়ে চুলে মাখুন। নারকেল তেলে কিছু তাজা কারিপাতা ছিঁড়ে ছিঁড়ে ছেড়ে দিয়ে পাঁচ-সাত মিনিট ধরে গরম করুন। চুলা থেকে নামিয়ে তেলটা জুড়াতে দিন। তেল জুড়ালে চুলের গোড়ায় ঘষে ঘষে সারা মাথায় মাখুন। আধা ঘণ্টা রেখে দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এমনকি রাতের বেলায় এই কারিপাতা-নারকেল তেল চাইলে সারা রাতও রেখে দিতে পারেন। পরদিন সকালে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন।
মেহেদি পাতার রসে রঙিন
মাথার পেকে যাওয়া চুলগুলো মেহেদি পাতার রসে রাঙিয়ে নিতে পারেন। কালো চুলের পাশাপাশি মেহেদিরঙা কিছু চুল অনেককেই খুব ভালো মানিয়ে যায়। মেহেদি পাতার গুঁড়ো বা প্যাকেটজাত মেহেদি পাউডারের সঙ্গে একটু কফির গুঁড়ো অল্প পানিতে মিশিয়ে মণ্ড তৈরি করুন। আরও ভালো ফল পেতে এই মণ্ডে অল্প টকদই ও লেবুর রসও মেশাতে পারেন। মেহেদির গুঁড়ো, কফি, দই ও লেবুর রস একত্রে মিশিয়ে দুই-তিন ঘণ্টার জন্য রেখে দিন। তারপর এই মণ্ড চুলের গোড়া থেকে ভালো করে চুলে মাখুন এবং দুই-তিন ঘণ্টা রেখে দিন। তারপর প্রথমে পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। পরে চুলে শ্যাম্পু করে নিন।
লেবুর রস ও বাদামের তেল
অ্যালমন্ড বা বাদামের তেলের সঙ্গে অল্প একটু লেবুর রস মেশান। আঙুলের ডগায় তেল নিয়ে ঘষে ঘষে চুলের গোড়ায় মাখুন। মাঝে মাঝে এই বাদামের তেল ও লেবুর রস চুলে মাখলে চুল পেকে যাওয়া কমতে পারে।
চুলে চা-পাতা মাখুন
চুল পাকার দাওয়াই হিসেবে হাতের কাছের চা-পাতা খুবই কার্যকর। কিছু চা-পাতা নিয়ে অল্প পানিতে ঘন করে সেদ্ধ করে নিন। পানি ঠান্ডা হলে চুলে মাখুন। চুলসহ মাথার তালুতে এই চায়ের পানি মেখে ঘণ্টা খানেকের জন্য রেখে দিন। শ্যাম্পু ছাড়া কেবল ঠান্ডা পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন।
এসবের পাশাপাশি নিয়মিতভাবে চুলে হালকা গরম সরিষা বা নারকেল তেল মাখুন। তেল মাখার সময় মাথার তালুটা মালিশ করার মতো করে ঘষে ঘষে মাখবেন। অকালে চুল পেকে যাওয়া ঠেকাতে এটা উপকারী। এ ছাড়া খাবারদাবারে যত্নবান হওয়ার পাশাপাশি প্রতিদিনই প্রচুর পানি পান করা প্রয়োজন। শরীরে পানির চাহিদা মিটিয়ে ঠিকঠাক পানি খেলে শরীর থেকে টক্সিন দূর হয়। অকালে চুল পাকার জন্য পরিবেশগত দূষণের সঙ্গে শরীরে জমা হওয়া নানা দূষিত উপাদান দায়ী।